নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
নতুন নৌকা বানানো এবং পুরাতন নৌকা মেরামতের ধুম। আসছে বর্ষা মৌসুম। প্রতি বছরই এ মৌসুমে নীলফামারীর তিস্তা নদী বেষ্টিত নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। তাইতো এবার বর্ষার আগেই তিস্তা তীরবর্তী এলাকাগুলোতে চলছে নৌকা তৈরির ধুম। সেইসঙ্গে মেরামত করা হচ্ছে পুরোনো নৌকা।তিস্তা তীরবর্তী নৌকার মাঝি, জেলে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় নৌকার ব্যবহার কমে যায়। তবে বর্ষা এলেই তিস্তা হয়ে ওঠে যৌবনা, টইটম্বুর। তখন তিস্তা র্তীরবর্তী নৌকার মাঝি, জেলে, কৃষক ও বাসিন্দাদের প্রধান ভরসা হয়ে ওঠে নৌকা। তাই বর্ষা মৌসুম এলেই বেড়ে যায় নৌকার কদর। বেড়ে যায় পুরোনো নৌকা মেরামতের ধুম।
সরেজমিনে তিস্তা ডালিয়া ব্যারাজ, ডাউয়াবাড়ি চরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সবাই নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। কেউ পুরাতন নৌকা আরও ভালো করে মেরামত করছেন।ডাউয়াবাড়ি নেকবক্ত মনছারের ঘাটের মাঝি হাসানুর কালবেলাকে বলেন, শুকনো মৌসুমে তিস্তা নদীতে পানি কমে যায় জেগে ওঠে ধু ধু বালুচর। এ সময় পুরোনো নৌকাগুলো মেরামত করে নিতে হয়। ইতোমধ্যে আমার একটি বড় নৌকা মেরামত করে বর্ষার জন্য প্রস্তুত করেছি। প্রায় ৩০ জন মানুষ ধারণক্ষমতা সম্পন্ন নৌকাটিকে নতুন করে বানাতে তার খরজ হয়েছে ১৮ হাজার টাকা।
একাধিক মাঝির সাথে কথা বলে জানতে পারা গেছে, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন নৌকা তৈরিতে লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়। এ সময় নৌকা কারিগরদের দামও অনেক বেড়ে যায়। হাত হিসেবে নৌকা মেরামতের মজুরি নির্ধারণ হয়। প্রতি হাত নৌকা মেরামতে আগে ১০০ টাকা নিলেও এখন ১৫০ টাকা দিতে হয়। এভাবে প্রতিটি বড় নৌকা মেরামতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা কারিগরদের মজুরি দিতে হয়। এমনকি চলতি মৌসুমে নৌকা মেরামত করে যাওয়ার সময় কারিগরদের আগামী মৌসুমের জন্য অগ্রিম টাকাও প্রদান করতে হয়।তিস্তাপাড়ে কাজ করতে আসা নৌকা কারিগর জোনাব আলী এ প্রদিবেদককে বলেন, নৌকা তৈরি ও মেরামত আমার পূর্ব পুরুষের পেশা। গত ৪২ বছর ধরে এ পেশা ধরে রেখেছি। প্রতি মৌসুমে ছোট-বড় প্রকারভেদে ২৫টি নৌকা তৈরি করে থাকি। পুরাতন নৌকাও মেরামত করি। এখন চলছে নৌকা মেরামতের শেষ সময়। ছোট নৌকা তৈরিতে ৮ থেকে ১০ এবং বড় নৌকা তৈরিতে ২৫ থেকে ৩০ দিন সময় লাগে। নতুন নৌকা তৈরিতে বিশেষ করে আকাশমণি, মেহগনি, কড়াই গাছ বেশি ব্যবহার হয়। ছোট নৌকা তৈরিতে ১২-১৫ হাজার এবং বড় নৌকা তৈরিতে ৩০-৪০ হাজার টাকা এবং পুরোনো নৌকা মেরামতে নৌকার আকার অনুযায়ী ৫-১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মজুরি পাই।
Leave a Reply